সব চরিত্র কাল্পনিক নয় (২)

Posted by

পর্ব – ২

ফেরা হয়নি আমার, ঘর

শুধু মুখ নয়, অনেক অবয়ব-ও ভেসে আসে সময়ের স্রোতে। নাম মনে পড়ে না, কিন্তু চেহারাটা ফুটে ওঠে। ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা টুকরো গুলো জোড়া লাগতে শুরু করে, অজান্তেই তৈরি হয় কোলাজ। সাদা কালো এক মায়াবী পর্দায় চলতে থাকে নির্বাক ছবি।

একেবারে নির্বাক নয়। আনাচে কানাচে অস্পষ্ট শোনা যায় কিছু কণ্ঠস্বর। কোনো সম্বোধন, ফেলে আসা ছোটবেলার ডাকনাম-টা ধরে। সাড়া না দিয়ে পারি না। আর আমিও সেই ছবিতে মিশে গিয়ে হয়ে উঠি জীবন্ত।

মন্তাজ

তখন বেলগাছিয়া ভিলা ভারী মনোরম এক জায়গা ছিল। সময়টা সত্তর দশকের গোড়ার দিক। কলকাতা শহরে ফ্ল্যাট বাড়ির সংস্কৃতি গড়ে উঠছে সবে। পড়শিরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন, বাড়িতে যাওয়া আসা হত প্রায়ই, যে কোনও সুত্রে একসাথে গাঁথা থাকতে চাইতেন সবাই। অনেকেই এসেছিলেন কোনও এক বড় যৌথ সংসার ছেড়ে, হয়তো স্বেচ্ছায় নয়, অপারগ হয়ে। শহর বেড়ে উঠছিল যে, তাই থাকার জায়গা অকুলান। কিন্তু মন তো পড়ে সেই পুরনো মজলিশে। তাই যদি কখনো সেই যৌথতার আভাস ইঙ্গিত পাওয়া যেত, তাকে উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করতে তৎপর হতেন সবাই। তাই আমাদের হাউসিং কমপ্লেক্স ফ্ল্যাট- সর্বস্ব না থেকে হয়ে উঠেছিল পাড়া-সুলভ।

ভিলার ভেতরে, সারিবদ্ধ ফ্ল্যাটবাড়ির মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট রাস্তা, তাদের দুপাশে একফালি করে সবুজের আস্তরণ, ঘাসে ঢাকা। সেই রাস্তায় সব সময় লোকের আনাগোনা। জানলায় বসে সারাদিন তাদের দেখলেই সময় কেটে যেত। একটু বড় হলে জানলাতেই বসে দেখতাম বড় দাদাদের ক্রিকেট খেলা ওই রাস্তায়। আরো পরে অবশ্য নিজেরাই বল পিটিয়েছি মনের সুখে। ওই রাস্তার একপাশে, এককোনে জড় করে রাখা শুকনো ডালপালায় জ্বলে উঠতো ন্যাড়াপোড়া – তার পরদিন আবীর আর রঙ মেখে রাস্তাটা হয়ে উঠতো ভীষণ রঙিন আর অনেকটাই অচেনা। অপেক্ষা থাকতো কতদিনে একটু একটু করে রঙ মুছে রাস্তাটা আবার আমার পরিচিত হয়ে উঠবে। ভরা বর্ষায় ভাসতো রাস্তা, আর একতলার আমাদের জানলা থেকে আম্মার বানিয়ে দেওয়া কাগজের নৌকো ছোট্ট হাতের অপটু নিক্ষেপে শুরু করতো তার যাত্রা। টিপটিপ বৃষ্টি আর মেঘলা আকাশ মাথায় করে ভেসে যেতে গিয়েও কখনো আটকে যেত সবুজ ঘাসজমিটাতে। ছপ ছপ করে জল ভেঙে কেউ যাচ্ছে, পাজামাটা গুটিয়ে হাঁটুর কাছে তুলে, ছাতা মাথায় দিয়ে। সেই তরঙ্গে আমার নৌকো বেসামাল, এর মধ্যে আবার বৃষ্টি নামলো জোরে – বড় বড় ফোঁটায় ভিজে একশা আমার নৌকো। এত বৃষ্টি যে আর কিছু ভালো করে দেখা যাচ্ছে না, আম্মা আমাকে জানলা থেকে সরিয়ে নিয়ে পাল্লা দুটো বন্ধ করে দিল। জলের ছাঁট আসছে ভেতরে। চৌকিতে শুয়ে শুয়ে বারান্দা দিয়ে দেখা যায় বৃষ্টির দাপট, মেঘ ডাকার শব্দ শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি অজান্তে।

ভিলার দুপাশে ছিল দুটো মাঠ। তার মধ্যে যেটা সত্যিই রাজসিক ছিল, সেটা রাজার মাঠ। পাইকপাড়ার রাজাদের জমি ছিল, তার এক প্রান্তে ছিল কলকাতার একমাত্র রাইফেল শুটিং ক্লাব। সেই মাঠের মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এক প্রাসাদ। আসল বেলগাছিয়া ভিলা।

একটু থামতে হচ্ছে।

যারা ইতিহাস ভালোবাসেন তারা হয়তো জানেন, কিন্তু আমি অনেক দিন পর্যন্ত এই প্রাসাদের ইতি-বৃত্তান্ত জানতাম না। এখন সহজেই জানা যায়, গুগল করলেই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’-এও এর উল্লেখ আছে। তাও একটু বলি। খুব সম্ভবত উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তৈরি হয় এই বাড়িটি, অকল্যান্ড নামক এক ইতালিয়ান সাহেবের কাছ থেকে এটি কেনেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, ১৮২৩ সালে। আর তারপর এটিকে সাজিয়ে তোলেন এক পরম মনোরম বাগানবাড়ি রূপে। তদানীন্তন এলিট সমাজে এই বাড়ি প্রতীকী ছিল বৈভব, বিলাস আর বেহিসেবি বিত্তের। পরে দেবেন্দ্রনাথের হাত ঘুরে মালিকানা বদল হয়, ১৮৫৬ সালে নিলামে ওঠা প্রাসাদটি কিনে নেন কাঁদির জমিদার প্রতাপ চন্দ্র সিংহ। তাঁর হাত ধরে জন্ম হয় বেলগাছিয়া থিয়েটার-এর, মাইকেল মধুসুদনের পা পড়ে এই বাড়িতে এর পাশাপাশি, এখানে পরিবেশিত হয় তাঁর লেখা প্রথম বাংলা নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’। হালফিল সত্যজিত রায়ের ‘জলসাঘর’ আর ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে আবার স্থান পায় এই প্রাচীন ঐতিহ্যটি। এর-ই মধ্যে, কালের নিয়মে, জরা গ্রাস করে; অনাদরের ছাপ পড়তে থাকে দেয়ালে দেয়ালে। একপাশে পড়ে থাকা একফালি মতিঝিল – যার ওপাশে পরে তৈরি হয়েছিল সিংহদের বসবাসের জন্য আর একটি ছোটোখাটো রাজবাড়ি – ক্রমশ মজতে থাকে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি (অথবা শেষের দিকে, ঠিক জানা নেই) এই বিশাল বাগানের বড় এক অংশ নিয়ে তৈরি হয় আমাদের আজকের বেলগাছিয়া ভিলা এম-আই-জি আর এল-আই-জি হাউসিং এস্টেট। আদি বেলগাছিয়া ভিলা তবুও রয়ে যায়, বেলগাছিয়া রাজবাড়ি নামান্তরিত হয়ে।  আর রাজবাড়ি – বেলগাছিয়া ভিলার মাঝামাঝি পড়ে থাকা পুরনো বাগানের একফালি জমি হয়ে ওঠে রাজার মাঠ।

দুটো পুরনো ছবি পাওয়া গেল নেট ঘেঁটে। প্রথমটি খুব সম্ভবত প্রতাপচন্দ্রের কনিষ্ঠ পুত্র শরৎচন্দ্রের তোলা ১৮৭০-৮০ সাল নাগাদ, দ্বিতীয়টি .১৯৮০-৯০-এর মাঝামাঝি – তখনও রাজার মাঠ স্বমহিমায় বিরাজমান।

BVillaBelgachia-Villa

ইতিহাস এই পর্যন্তই, বাকিটা নষ্টালজিয়া।

রাজবাড়ির সামনে প্রশস্ত চাতাল, দুপাশে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। চাতাল শেষ হতেই নেমে এসেছে সিঁড়ি, সাথে সাথে পাঁচিল-ও। এই সিঁড়ি দিয়েই, খুব ছোটবেলায়, আম্মা বা মা-এর হাত ধরে উঠে আসা চাতালে। চাতালের ঠিক মাঝখানটায় একটা ছোট্ট ধাপ উঠে অনেক উঁচু উঁচু সিংহাসনের মতো বিশালাকৃতি মার্বেলের চেয়ার। আর নিচে চিনেমাটির টুকরো গাঁথা রঙিন মেঝে, নানারকম রঙ খেলছে সেখানে সূর্যের আলো পড়ে। আমি আধশোয়া হয়ে চেষ্টা করছি একটা চীনেমাটির টুকরো খুঁটে বার করার। নরম রোদে চাতালের পাশে অযত্নে বেড়ে ওঠা জংলি ফুলগাছে উড়ে বসছে প্রজাপতি, বুনো পোকা। জংলা মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে ভাসছে, আজও, চোখ বন্ধ করলে।

বাড়িটার পিছন দিকটাতে ছিল পোরটিকো, যার দুধারে সারি দেওয়া খিলান করা দরজা, রঙিন কাঁচ লাগানো। কোন প্রাচীন কালে এখানে এসে দাঁড়াতো জুড়িগাড়ি, নামতেন দেশি-বিদেশি সাহেবসুবোরা। পোরটিকোর মুখে ছিল একটা বিশাল মার্বেলের সিংহ। কোনও নির্জন দুপুরে, স্কুলের ছুটি থাকতো যখন, এদিকে এলে গা ছমছম করে ওঠা নিস্তব্ধতা সঙ্গী করে এসে দাঁড়াতাম কোন একটি দরজার সামনে। কাঁচে চোখ লাগিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম ভিতরে, আবছা দেখা যেত ঝাড়বাতি, পাথরের মূর্তি, অস্পষ্ট কিছু পেইনটিং। চমকে দিয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে যেত পায়রা, আর হঠাৎ দমকা হাওয়ায় ভেসে আসা নিঃশ্বাসে গায়ে কাঁটা দিত, তখন টেনে দৌড় মাঠের দিকটাতে।

মাঠটা ছিল বিকেলের ফুটবল আর শীতের ক্রিকেটের কেন্দ্রস্থল। প্রথম বুট পরে ফুটবল খেলা এখানেই। একদিনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-এ হাতেখড়িও এখানে। বর্ষায় সর-রা, বা স্লাইডিঙ ট্যাকল মারার কেরামতি দেখে এবং ঠেকে শেখা এই মাঠেই। কেন আর কিভাবে এই মাঠ একদিন দখল হয়ে গেল, গড়ে উঠলো এসবেস্টস শেডে ঢাকা কারখানা, জানা নেই। রাজবাড়ীটাও চিরদিনের জন্যে দৃষ্টি থেকে হারিয়ে গেল।

অন্যদিকে যে মাঠটা ছিল, দুপাশে পুকুর নিয়ে অনেকটা তেকোনা দ্বীপের মতো, তাকে আমরা বলতাম পার্ক। এক কোনায় একটা আধভাঙা দোলনা, একটা স্লিপ। এসব দিয়ে কখনো পার্কটা সাজানোর চেষ্টা হয়েছিলো, কিন্তু স্থায়ী হয় নি বেশীদিন। অনেকটা জায়গা জুড়ে চলতো বড়দের ফুটবল খেলা। আর মায়েরা ওরই মধ্যে ব্যস্ত খুদেদের সামলাতে। কংক্রিটের বেঞ্চ ছিল দুধারে, সেখানে ভিড় প্রবীণদেরও, বৈকালিক আড্ডা জমে উঠেছে। দুর্গাপুজো বরাবরই পার্কে হতো, এখনো হয়। প্যান্ডেলটা যেখানে হতো, তার বাঁদিক ঘেঁষে প্র্যাকটিস পিচ – সেলাই খুলে যাওয়া বাতিল ডিউস বলে আর পারচমেনট উঠে যাওয়া ব্যাটে জব্বর টক্কর।

একটু বড় হওয়ার পর, আর একটু স্বাধীন হওয়ার পর, ফুটবল খেলার শেষে লাগোয়া পুকুরটাতে নামার মস্তানি। সাঁতার কোনওকালেই জানতাম না, তবুও দলছুট হওয়া চলে কি? একটু একটু করে আমাদের উৎসাহ দেখে বেশ কয়েকজন পাড়ার দাদাও নামলেন, আমাদের সাঁতার শেখাবেন বলে। মনে আছে অপুদা, বিজনদার কথা। অনেকে শিখেও গেল, আমি ঘাটের সিঁড়ির ওপাশে যেতে পারলাম না। একবার পাকামি করে ফুটবলটা বুকে নিয়ে ভাসতে গিয়েছিলাম, বলটা হড়কে বেরিয়ে গেল। প্রথম জলে ডোবার ভয়, খানিকটা জল খাওয়ার পর কেউ একটা টেনে নিয়ে এসেছিল পাড়ে। এসব বাড়িতে জানানোর কোনও প্রশ্নই ছিল না।

ভিলার সামনে বড় রাস্তা, সেখানে ডানদিকে একপাশে ৩বি বাস টারমিনাস। বাঁ-দিক থেকে রাস্তাটা এসেছে, দূরে একটু ঠাহর করলে দেখা যাচ্ছে সেটা দুভাগ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে, আর তাদের মাথায় বসানো একটা উলটোনো “W”। জায়গাটা দত্তবাগান মোড়, আর ওইটাকে বলা হত M-গেট, মিল্ক কলোনিতে প্রবেশ করার সদর দরজা। এবার আবার ডানদিকে ঘাড় ঘোরালে, দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটা বাস আর খালাসিদের জটলা ছাড়িয়ে, খানিক দূর গিয়ে রাস্তাটা মিশে গেছে একটা বড় মাঠে। ওখানেই শেষ রাস্তাটা। মাঠের প্রান্তে পাঁচিল, আর তার ওপারে চিৎপুর রেল ইয়ার্ডের লাইন। আর রাস্তাটা যেখানে শেষ হলো, সেখানেই শুরু মিল্ক কলোনির। হরিণঘাটার বোতলের দুধ বাড়িতে আসতো না সেই সময় এমন উদাহরন বিরল। সেই বটলিং প্লান্ট-টা ছিল এখানে। প্লান্ট-এর কম্পাউন্ড লাগোয়া কর্মীদের বাসস্থান, সেই ফ্ল্যাটবাড়ির পোশাকি নাম মিল্ক কলোনি।  ভোরবেলা আলো ফোটার আগে, একের পর এক, প্লান্ট-এর গেট থেকে তিরবেগে ছিটকে বেরোতো ডেলিভারি ভ্যান – চলতি ভাষায় দুধের গাড়ি। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে সকালের কাগজ আসার আগেই পোঁছে যেত দুধের বোতল। রাস্তায় বসিয়ে যাওয়া কয়লার উনুনে ধোঁয়া উঠছে, কাঁধে গামছা ফেলে ঠুংঠাং আলগা চলেছে দিনের প্রথম রিকশাওয়ালা। দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দিনের প্রথম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে ফুটপাথের টগর ফুলগাছটার দিকে তাকিয়ে কোনো মাঝবয়েসী।

খুবই ছোট তখন, বাবার সঙ্গে বাজার যাচ্ছি আমি। বড় রাস্তার এপাশে বাজার বসে রোজ সকালে। খালি বাজারের থলিটা আমার হাতে। টুকটাক বাজার সেরে বাবা আমার হাত ধরে রাস্তা পেরিয়ে ওপারে, থলিটার মালিকানাও বদলেছে। পাড়ার সবেধন নীলমণি মিষ্টির দোকান ‘মিষ্টিমুখ’ (এর সম্মানার্থে ৩বি বাস-টাও ছোট্ট করে দাঁড়াতো দোকানের সামনে), আজ জিলিপি কেনা হবে। তারপর, একটু এগিয়ে, বীরেন্দ্রনগরের দিকে ঢোকার ছোট রাস্তাটার মুখে, শ্রীমা স্টোর্স-এর উলটোদিকে ডিমকাকুর দোকান। এখান থেকে পাউরুটি আর ডিম কেনা হবে। অদ্ভুত কায়দায় এক-একটা ডিম তুলে আলোর দিকে তাকিয়ে, এক চোখ বন্ধ করে পরীক্ষা করতো ডিমকাকু, আর সন্তুষ্ট হলে তবেই ঠোঙায় ভরতো সেটা। ওই যে বললাম, আত্মীয়তা পাতানো তখন স্বাভাবিক ছিল, তাই সবাই ছিল কাকু বা মাসী। ডিমকাকু বলে ডাকতে বাবাই শিখিয়েছিল।

ডিম আর পাউরুটি বাজারের ব্যাগে চালান করে ডিমকাকুর কাছ থেকে নিয়ে বাবা সিগারেট ধরালো একটা – চারমিনার খেত বাবা – ব্যাগ টা একপাশে হেলান দিয়ে রেখে। দুহাত দিয়ে আড়াল করে দেশলাই জ্বালাচ্ছে যখন, আমি হঠাৎ একছুটে রাস্তা পেরোতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মাঝরাস্তায় কুপোকাত। খেয়ালই করিনি, ডানদিক থেকে ঝড়ের গতিতে আসছে একটা দুধের গাড়ি। এই গাড়িরা তাদের গতির ঔদ্ধত্ব ছড়িয়ে যখন যেত, পথচারীরা সন্ত্রস্তে সরে দাঁড়াতেন। স্পষ্ট মনে আছে, রাস্তায় শুয়ে দেখছি গাড়ির অবয়ব-টা ক্রমশ বড় হচ্ছে, কিন্তু মগজে কোনও সংকেত যাচ্ছে না যে উঠে দৌড়তে হবে।

একজন কিন্তু খেয়াল রেখেছিল আমার গতিবিধির ওপর। কিভাবে জানিনা, দোকানের জিনিসপত্র ফেলে বাবাকে টপকে রাস্তায় ডিমকাকু। আমার সামনে দাঁড়িয়ে দুহাত তুলে চিৎকার করে থামতে বলছে গাড়িটাকে, আর কোনও কপালগুনে তীব্র ব্রেক মারার শব্দের সঙ্গে রাস্তার ধুলো বেশ কিছুটা উড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেল গাড়িটা, আমাদের থেকে কয়েক হাত দূরে। ততক্ষনে বাবা এসে আমায় কোলে তুলে নিয়েছে।

অনিলদা, মানে ডিমকাকু’র এই ঘটনা পরবর্তী কালে মনে ছিল কিনা জানিনা। আমার ছিল। অনিলদা’র বাড়ি ছিল বীরেন্দ্রনগরেই, পরে বহুবার সামনাসামনি হয়েছি। তখন আর দোকানটা নেই অনিলদার, সেখানে বসে স্বরূপ (সেও এক চরিত্র বটে)। কখনো কথা হয়নি এই ঘটনা নিয়ে, বলা হয়ে ওঠেনি ধন্যবাদ, আমার প্রাণটা এভাবে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচানোর জন্য। শুধু বীরেন্দ্রনগরের রোয়াকে বসে আড্ডা মারতে মারতে অনিলদা সামনে দিয়ে গেলে সিগারেটটা লুকিয়ে ফেলতাম। অনিলদা,ওরফে ডিমকাকু, দেখেও হয়তো দেখতো না। কিছু চরিত্ররা নির্বাকই থেকে যায়।

ছায়াছবিও ফুরিয়ে আসে।

- পরবর্তী পর্ব - 

One comment

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s